omidon 10mg এর কাজ কি

ভূমিকা:

ওমিডন (Omidon) একটি বহুল ব্যবহৃত ঔষধ যা মূলত বমি প্রতিরোধ হজমের সমস্যার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি একটি প্রো-কাইনেটিক এবং অ্যান্টি-এমেটিক ড্রাগ। ওমিডনের সক্রিয় উপাদান হলো Domperidone, যা মূলত বমি বমি ভাব (nausea), বমি (vomiting), গ্যাস্ট্রিকের অস্বস্তি, এবং হজমজনিত জটিলতা দূর করতে ব্যবহৃত হয়। Domperidone মূলত পেটের গতিশীলতা (gastrointestinal motility) বাড়ায় এবং পাকস্থলীর খালি হওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।

ওমিডনের শ্রেণীবিন্যাস:

  • ঔষধের নাম: ওমিডন (Omidon)
  • সক্রিয় উপাদান: Domperidone
  • ড্রাগ ক্লাস: Prokinetic agent এবং Dopamine antagonist
  • প্রচলিত মাত্রা: ১০ মি.গ্রা. (চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী)

ওমিডনের কাজ বা কার্যপ্রণালী:

. বমি বমি বমি ভাব দূর করা:

Domperidone মূলত ডোপামিন রিসেপ্টর ব্লকার (D2 receptor antagonist) হিসেবে কাজ করে। এই রিসেপ্টরগুলো মস্তিষ্কের chemoreceptor trigger zone (CTZ) নামক একটি অংশে অবস্থিত, যা বমির সংকেত তৈরি করে। Domperidone এই রিসেপ্টরগুলো ব্লক করে বমির সংকেত পাঠানো বন্ধ করে দেয়, ফলে বমি বমি বমি ভাব কমে যায়।

. হজম প্রক্রিয়া উন্নত করা:

Domperidone পাকস্থলীতে থাকা খাবার নিচে অন্ত্রে পাঠাতে সাহায্য করে। যাদের delayed gastric emptying বা হজমে বিলম্ব ঘটে, তাদের জন্য এটি খুব উপকারী। এটি পাকস্থলীর পেশীকে সক্রিয় করে, ফলে হজমের গতি বৃদ্ধি পায়।

. গ্যাস্ট্রিক বুকজ্বালার উপশম:

Domperidone গ্যাস্ট্রিক এসিড রিফ্লাক্স প্রতিরোধে সাহায্য করে। যারা GERD (Gastroesophageal Reflux Disease) বা অ্যাসিড রিফ্লাক্স সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য ওমিডন কার্যকর। এটি খাদ্যনালিতে অ্যাসিড যাওয়া রোধ করে বুকজ্বালা কমায়।

. গ্যাস অম্বলের উপশম:

Domperidone পেটের মধ্যে জমে থাকা গ্যাস বা বাতাস সরাতে সহায়তা করে। যারা অম্বল বা পেটে ফাঁপাভাব অনুভব করেন, তারা এই ঔষধ সেবনে আরাম পান।

ব্যবহার বা Indications:

. বমি এবং বমি বমি ভাব
. গ্যাস্ট্রিক সমস্যা
. খাবারের পর অতিরিক্ত অস্বস্তি বা পেট ভরা ভরা লাগা
. গ্যাস, অম্বল এবং বুকজ্বালা
. হজমে বিলম্ব হওয়া
. অ্যাসিড রিফ্লাক্স রোগ (GERD)
. পেটের ব্যথা অস্বস্তি

ওমিডন ব্যবহারের নিয়ম:

  • ওমিডন সাধারণত খাবারের ১৫-৩০ মিনিট আগে খাওয়া উচিত।
  • দিনে - বার খাওয়া যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মাত্রা নির্ধারণ করা উচিত।
  • শিশু গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

সতর্কতা নিষেধাজ্ঞা:

যাদের জন্য Omidon ব্যবহার নিরাপদ নয়:

. যারা লিভার বা কিডনি সমস্যায় ভুগছেন
. গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী নারীরা
. হার্টের সমস্যা যেমন: দীর্ঘ QT interval থাকলে
. যারা অন্য কোনো ডোপামিন ব্লকার ঔষধ গ্রহণ করছেন

সতর্কতা:

  • Omidon দীর্ঘদিন ব্যবহার করা ঠিক নয়। সাধারণত -১০ দিন ব্যবহার করা হয়।
  • যদি মাথা ঘোরা, বুকে ব্যথা, বা হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া দেখা দেয়, তা হলে ঔষধ বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • শিশুদের ক্ষেত্রে ওমিডন ব্যবহার অত্যন্ত সতর্কতার সাথে করতে হয়।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side Effects):

যদিও ওমিডন অনেক ক্ষেত্রে নিরাপদ, তবে কিছু ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, যেমন:

  1. মাথা ঘোরা বা ঝিমঝিম ভাব
  2. মুখ শুকিয়ে যাওয়া
  3. বুকে ব্যথা বা হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া
  4. স্তন ফোলাভাব বা ব্যথা (দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার করলে)
  5. স্তন থেকে দুধ নিঃসরণ (rare case)
  6. পেট ব্যথা বা ডায়রিয়া

মিথষ্ক্রিয়া (Drug Interactions):

ওমিডন কিছু ঔষধের সঙ্গে একসাথে খাওয়া উচিত নয়। যেমন:

  1. Antifungal ঔষধ (ketoconazole, fluconazole)
  2. Antibiotics (erythromycin)
  3. Heart medicine (amiodarone, quinidine)
  4. Antidepressants
  5. Antacids বা gastric protecting drugs (যেমন: ranitidine, omeprazole)

এইসব ঔষধ Domperidone এর কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বাড়াতে পারে।

বাজারে ওমিডনের ব্র্যান্ড নাম:

বাংলাদেশে Domperidone বিভিন্ন নামে পাওয়া যায়, যেমন:

  • Omidon (Renata)
  • Motigut (Square)
  • Motinorm (Eskayef)
  • Domperon
  • Domel
    ইত্যাদি।

বিকল্প ঔষধ:

Domperidone ছাড়াও অন্য কিছু প্রো-কাইনেটিক অ্যান্টি-এমেটিক ঔষধ আছে, যেমন:

  • Metoclopramide
  • Itopride
  • Cisapride (বর্তমানে কম ব্যবহৃত)

তবে Domperidone তুলনামূলক নিরাপদ কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত বলে বেশি ব্যবহৃত হয়।

গর্ভবতী শিশুদের ক্ষেত্রে ওমিডন:

গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে:

Omidon গর্ভাবস্থায় শুধুমাত্র তখনই ব্যবহার করা উচিত যখন এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহৃত হয়। নিরাপত্তার দিক থেকে এটি শ্রেণী C তে পড়ে।

শিশুদের ক্ষেত্রে:

Domperidone শিশুদের জন্যও ব্যবহৃত হয় তবে মাত্রা সময়সীমা কঠোরভাবে নির্ধারিত হওয়া দরকার। বিশেষ করে এক বছরের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি থাকে।

ওমিডন ব্যবহারের কিছু টিপস:

  1. খালি পেটে খেলে বেশি কার্যকর।
  2. ঔষধ খাওয়ার পর কমপক্ষে ৩০ মিনিট শুয়ে না থাকা উচিত।
  3. অ্যালকোহল বা ধূমপান পরিহার করা উচিত ওমিডন গ্রহণের সময়।
  4. বেশি দিন ব্যবহার করলে হরমোনজনিত সমস্যা হতে পারে, যেমন স্তনে ব্যথা, দুধ নিঃসরণ ইত্যাদি।

উপসংহার:

ওমিডন ১০ মি.গ্রা. (Omidon 10mg) একটি কার্যকর বহুল ব্যবহৃত ঔষধ যা মূলত বমি, বমি বমি ভাব, গ্যাস্ট্রিক, গ্যাস এবং হজমের সমস্যার সমাধানে ব্যবহৃত হয়। এটি ডোপামিন রিসেপ্টর ব্লকার হিসেবে কাজ করে এবং পাকস্থলীর মুভমেন্ট বাড়িয়ে হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে।

তবে এর ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার বিপজ্জনক হতে পারে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়াতে নির্ধারিত মাত্রা সময় অনুসরণ করাই উত্তম। বিশেষ করে শিশু বয়স্কদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সচেতনতা প্রয়োজন।

Post a Comment