নুহা রাত ১ টার দিকে ডাইনিং এ পানি খাওয়ার জন্য জগ থেকে পানি ঢালছিলো। হঠাৎ করেই সে তার পেছন দিকে একটা শারীরিক স্পর্শ অনুভব করে। চমকে পেছনে তাকায়। দেখে তার ভাশুর রায়হান তার শরীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। নুহা ওখান থেকে বের হতে চাইলে রায়হান তার সর্বশক্তি দিয়ে নুহার হাত ধরে ফেলে।
"ছাড়েন, বলছি।"
"যদি না ছাড়ি!"
"আপনার কতো বড়ো সাহস! আপনি আপনার ছোট ভাইয়ের বউ এর শরীর টাচ করেন?"
"এই শরীরের জন্যই তো সবকিছু। চলো, আমার রুমে।"
"ছিঃ! আপনি এখন না ছাড়লে আমি কিন্তু চিৎকার দিবো!"
"দাও, দাও। বদনাম কিন্তু তোমারই হবে। আর এতো সতী সেজে লাভ কী! জামাই তো থাকে বিদেশে। মাঝে মাঝে রুমে আইসো। শরীর ঠান্ডা করে দিবো নি।"
নুহা আর শুনতে পারে না। কানে আঙুল দিয়ে রাখে। এরকম অবস্থায় সে এই প্রথমবার পড়ে নি। প্রায় সময়ই এই রায়হান তাকে অশ্লীল কথাবার্তা বলে, বাজে ইঙ্গিত করে। তার শ্বাশুড়িকে সে বিষয়টি বলেছিলো কিন্তু উনি উলটো নুহার দোষই দিয়েছেন। আর একবার রায়হানের বউ মানে তার জা কে অল্প একটু হিন্টস দিয়েছিলো। কিন্তু উনি বলেছিলেন, " মেয়ে মানুষ সুযোগ না দিলে পুরুষ মানুষ তার কাছে যায় কেম্নে?" মানে দোষটা পরোক্ষভাবে নুহার উপরেই পড়ে।
এর কিছুদিন পর নুহার ভাই পলাশ তার বোনকে দেখতে এলো। পেশায় সে একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। নুহা তার সমস্যার কথা পলাশ এর সাথে শেয়ার করে। পলাশ কিছুক্ষণ চিন্তা করে নুহাকে টেনশন করতে নিষেধ করে। নুহা মাথা নেড়ে সায় দেয়।
এর চারদিন পর নুহা বাসায় একা ছিলো। নুহার শ্বশুর অসুস্থ থাকায় নুহার শ্বাশুড়ি ও জা হাসপাতালে অবস্থান করছে। নুহা রান্না শেষ করে গোসল করতে যাবে এমন সময় বাসার ডোরবেল টা বেজে উঠে। তড়িঘড়ি করে দরজা খুলে দিতেই দেখে রায়হান দাঁড়িয়ে আছে। মুখে একটা ফিচেল হাসি। শিউরে উঠে নুহা। নুহাকে ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে রায়হান।
" আপনি? এই সময়ে?"
"হুম। খাবার নিতে আসলাম। হাসপাতালে নিয়ে যাবো।"
"কিন্তু খাবার নিতে তো আপার আসার কথা ছিলো।"
"তার কী আগের মতো আর বয়স আছে? কাহিল লাগছে তার শরীর। সে এখন আসতে পারবে না। জানো না তো তুমি, বিছানাতেও সে আমায় তৃপ্তি দিতে পারে না। নুহা, তুমি একবার আমার কাছে আসো না! প্লিজ!"
"ছিঃ, ছিঃ! আপনি এতো নীচ!"
"প্লিজ এসব বলো না। তুমি শুধু একবার কাছে আসো। তোমারও তো চাহিদা আছে, আছে না? কেউ জানবে না কিছু। শুধু তুমি আর আমি! তোমার ও ভালো লাগবে, প্রমিজ!"
নুহা পেছনে সরে গেলো। রায়হানও নুহার দিকে সরে আসছে গুটি গুটি পায়ে। নুহা অনেক অনুরোধ করছে।
" প্লিজ, আমার ক্ষতি করবেন না।"
"ক্ষতি বলছো কেনো? আমি তো তোমার লাভ করে দিবো, লক্ষ্মী টি। একবার আমার উপর ভরসা রাখো।"
এই বলে রায়হান ঝাপিয়ে পড়ে নুহার উপর। ধস্তাধস্তি শুরু হয় দুজনার। নুহা কোনভাবেই রায়হানের শক্তির সাথে পেরে উঠছে না। এমনসময় কলিং বেলের শব্দ রায়হানের গতি থামিয়ে দেয়। কলিং বেল বেজেই যাচ্ছে। ধীর পায়ে রায়হান দরজা খুলে দিতে এগিয়ে যায়। নুহা তখন আলুথালু অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছে।
দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে নুহার শ্বাশুড়ি আর জা। নুহা ঐ অবস্থায় তাদের কাছে দৌড়ে যায়। কেঁদে কেঁদে সব কথা বলতে শুরু করে। তখন রায়হান বলে,
"মা, এই মেয়েটা মিথ্যেবাদী। আমাকে প্ররোচিত করতে চেষ্টা করছিলো। আমি রাজী হচ্ছিলাম না। তাই নিজের কাপড়চোপড় নিজেই এমন এলোমেলো করে রেখেছে। এজন্যই বলেছিলাম এই বউকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দাও। তা না হলে কোনদিন কোন কেলেঙ্কারি ঘটে যায়!"
"না, মা উনি মিথ্যা বলছেন। আমায় বিশ্বাস করুন মা। আমি এমন মেয়ে নই।" নুহা জোরে বলে উঠলো।
নুহার শ্বাশুড়ি বললো, "তুমি যে কেমন মেয়ে তা আমার জানা আছে, বাপু! শেষমেশ ভাশুরের সাথে! ছিঃ! "
নুহা ছিটকে সরে এলো তার শ্বাশুড়ির কাছ থেকে। তারা তাকেই দোষী মনে করছে! একবার তাকালো রায়হানের দিকে। শয়তানটা মুখে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে রেখেছে। এমন সময় নুহার জা সন্দেহ ভরা দৃষ্টি নিয়ে তার স্বামীকে বললো,
" তুমি এসময়ে বাসায় কেনো, রায়হান? আমি তো তোমাকে বলেই দিয়েছিলাম আজ খাবার আনতে হবে না। আব্বাকে বিকেলের দিকে রিলিজ দিয়ে দিবে।"
রায়হান চুপ করে থাকলো। আমতা আমতা করে কিছু বলার চেষ্টা করছে। নুহার শ্বাশুড়ি তখন বলে উঠলেন,
" এটা রায়হানের বাড়ি। ওর যখন ইচ্ছে আসবে, যখন ইচ্ছে যাবে। তুমি বলার কে? "
নুহার জা চুপ করে গেলো। তবে নুহা বুঝতে পারলো রায়হান প্ল্যান কষেই এই সময় বাসায় এসেছে। নুহার শ্বাশুড়ি নুহার দিকে তাকিয়ে আবার বললো, " এই চরিত্রহীনা মেয়েকে অনেক সহ্য করছি, আর না। এবার ওকে এই বাড়ি থেকে তাড়াতে হবে। রায়হান, তুই ওর বাপের বাড়িতে খবর দে। রাকিবকেও জানাতে হবে সবকিছু।"
নুহা আঁতকে উঠে বলে, "মা না! রাকিবকে কিছু বলবেন না। ও বিদেশে একা একা থাকে। অনেক টেনশন করবে। সহ্য করতে পারবে না। "
নুহার শ্বাশুড়ি বললেন, " রঙ ঢং করার আগে এসব মনে ছিলো না? আমার কথাই ফাইনাল কথা।"
সন্ধ্যায় নুহার পরিবারকে ডাকা হয়েছে তার শ্বশুর বাড়িতে। সবাই এসেছেন। মাথা নিচু করে বসে আছেন নুহার মা-বাবা। নুহার ভাই পলাশ বললো,
"আমাদের কেনো ডেকেছেন, জানতে পারি?"
নুহার শ্বাশুড়ি একটা বাঁকা হাসি দিয়ে সব ঘটনা খুলে বললেন। এদিকে নুহা অনবরত কান্না করে যাচ্ছে। সে বলছে, "আমি নির্দোষ। আমি কিছু করি নি।" পলাশ ইশারায় নুহাকে থামতে বললো। নুহার শ্বাশুড়ি কথা শেষে বললো, "আপনারা আপনাদের মেয়ে নিয়ে চলে যান। এই মেয়েকে আর বাড়িতে রাখবো না।"
পলাশ বললো," ঠিক আছে, ধরে নিচ্ছি এটা আমার বোনের দোষ। কিন্তু যদি এটা আপনার ছেলের দোষ হয় তবে কী আপনার ছেলেকেও বাড়ি থেকে বের করে দিবেন? "
নুহার শ্বাশুড়ি কথা শুনে থমকে গেলো। আমতা আমতা করে বললেন, " অবশ্যই। আমার বিচার সবার জন্যই সমান।"
পলাশ একটা শুষ্ক হাসি দিয়ে বললো, " আপনার কথার মান যেনো থাকে।"
তারপর পলাশ তার কাছে থাকা ল্যাপটপ ওপেন করলো। সে আগে থেকেই নুহার রুম ও ড্রয়িংরুমে খুব ছোট সিসিটিভি ক্যামেরা ফিট করে রেখেছিলো। ল্যাপটপে ক্যামেরার রেকর্ডিং সমূহ সবার সামনে উপস্থাপন করলো পলাশ। রায়হানের কুকীর্তি সব ধরা পড়ে গেলো। মুখোশ উন্মোচিত হলো এক শয়তানের। নুহার শ্বাশুড়ি মাথা নিচু করে আছে।
পলাশ একটা ভ্রু নাচিয়ে নুহার শ্বাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বললো, "কী এবার কথা রাখতে পারবেন তো? আপনারা খুব চালাক। কীভাবে একটা মেয়েকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে হয়রানি করা যায় তার ষোলকলা আপনাদের জানা আছে। তবে মনে রাখবেন, আগের যুগ আর নেই। আপনাদেরকে কীভাবে শায়েস্তা করতে হয় তার কৌশলও আমার জানা আছে।"
রায়হান একেবারে চুপ হয়ে গেছে। লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে। নুহার শ্বাশুড়ি বললো, "আসলে এতোকিছু আমরা জানতাম না। যা হওয়ার হয়েছে। নুহা এখানেই থাক। আমরা ওকে মেয়ের মতোই রাখবো। আর রায়হানেরও বিচার করবো আমরা।"
পলাশ হেসে বললো," কষ্ট করে আর আপনাদের কিছু করতে হবে না। অনেক কষ্ট করেছেন। একটা নির্দোষ মেয়েকে অপরাধী বানিয়েছেন। আমি পুলিশকে জানিয়েছি সব৷ উনারা পথে আছেন। রায়হানের মতো বেয়াদব লোককে শায়েস্তা করার জন্য পুলিশ সঠিক ভূমিকা পালন করবে।"
এই বলে পলাশ তার বোন নুহার হাত ধরে প্রস্থান এর প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলো।
সমাপ্ত
