নমনীয়তা বৃদ্ধির ব্যায়ামের উপকারিতা
ভূমিকা
আমাদের
দেহের
অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে কাজ
করতে
হলে
শরীরের
নমনীয়তা (Flexibility) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নমনীয়তা মানে
হলো—পেশি ও জয়েন্টের স্বাভাবিকভাবে প্রসারিত ও
সংকোচনের ক্ষমতা। নিয়মিত
নমনীয়তা বৃদ্ধির ব্যায়াম করলে
শরীর
শুধু
হালকা
ও
প্রাণবন্ত হয়
না,
বরং
নানা
রকমের
ব্যথা
ও
আঘাত
থেকেও
রক্ষা
পাওয়া
যায়।
এই
প্রবন্ধে আমরা
জানবো
নমনীয়তা বৃদ্ধির ব্যায়াম কী,
কেন
এটা
প্রয়োজন, এবং
এ
ধরনের
ব্যায়ামের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে।
নমনীয়তা বৃদ্ধির ব্যায়াম কী?
নমনীয়তা বৃদ্ধির ব্যায়াম বলতে
এমন
সব
ব্যায়াম বোঝায়
যেগুলো
শরীরের
পেশি
ও
জয়েন্টকে টানটান
করে
এবং
ধীরে
ধীরে
প্রসারিত করতে
সহায়তা করে।
এগুলোর
মধ্যে
পড়ে:
- স্ট্রেচিং
(Stretching)
- ইয়োগা
(Yoga)
- পাইলেটস
(Pilates)
- মোবিলিটি
ওয়ার্কআউট
- ডায়নামিক
ও স্ট্যাটিক স্ট্রেচিং
নমনীয়তা বৃদ্ধির ব্যায়ামের উপকারিতা:
১. পেশি ও জয়েন্টের গতিশীলতা বাড়ায়
নমনীয়তা বৃদ্ধির ব্যায়াম করলে
পেশি
ও
জয়েন্ট
সহজে
প্রসারিত হতে
পারে।
এটি
শরীরকে
যে
কোনো
দিকেই
ঘোরাতে,
বাঁকাতে বা
উঠতে-বসতে সাহায্য করে।
যাঁরা
দীর্ঘ
সময়
বসে
কাজ
করেন,
তাঁদের
জন্য
এটি
বিশেষ
উপকারী।
২. আঘাতের ঝুঁকি কমায়
ফুটবল,
ব্যাডমিন্টন, দৌড়
ইত্যাদি খেলায়
বা
ওয়ার্কআউটে হঠাৎ
করে
শরীর
বাঁকানো, লাফ
দেওয়া
ইত্যাদি সময়
পেশিতে
টান
পড়ে।
কিন্তু
যদি
শরীর
নমনীয়
থাকে,
তাহলে
ইনজুরি
বা
আঘাত
লাগার
ঝুঁকি
অনেক
কমে
যায়।
৩. পেশির ব্যথা ও সংকোচন কমায়
যাঁরা
নিয়মিত ব্যায়াম করেন
বা
ভারী
কাজ
করেন,
তাঁদের
পেশিতে
টান
বা
ব্যথা
হওয়া
স্বাভাবিক। নমনীয়তা ব্যায়াম করলে
রক্ত
চলাচল
ভালো
হয়
এবং
পেশির
ক্লান্তি দূর
হয়।
এতে
ব্যথাও
অনেকটাই হ্রাস
পায়।
৪. রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে
নমনীয়তা ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের
বিভিন্ন স্থানে
রক্ত
চলাচল
বাড়ে।
ফলে
অক্সিজেন ও
পুষ্টি
সহজেই
শরীরের
প্রত্যন্ত কোষে
পৌঁছায়। এটি
শরীরকে
আরও
চনমনে
ও
প্রাণবন্ত রাখে।
৫. সঠিক ভঙ্গিমা বা পোস্টার তৈরি করে
আজকের
যুগে
কম্পিউটারের সামনে
ঘণ্টার
পর
ঘণ্টা
বসে
থাকার
কারণে
অনেকের
শরীরের
ভঙ্গি
খারাপ
হয়ে
যায়।
স্ট্রেচিং ও
নমনীয়তা বৃদ্ধির ব্যায়াম কাঁধ,
পিঠ,
ঘাড়
ঠিক
রাখতে
সাহায্য করে।
এটি
মেরুদণ্ডকে সোজা
রাখে
ও
সঠিক
ভঙ্গি
তৈরি
করে।
৬. স্ট্রেস ও মানসিক চাপ হ্রাস করে
স্ট্রেচিং করার
সময়
শরীরের
পেশি
ধীরে
ধীরে
প্রসারিত হয়,
যা
আমাদের
স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত
করে।
এটি
“এন্ডোরফিন” নামক
হরমোন
নিঃসরণ
করে,
যা
মনকে
শান্ত
করে
ও
মানসিক
চাপ
কমায়।
তাই
নমনীয়তা ব্যায়াম মানসিক
স্বাস্থ্যের জন্য
দারুণ
উপকারী।
৭. শরীর হালকা ও স্বচ্ছন্দ লাগে
প্রতিদিন সকালে
বা
ঘুমের
আগে
নমনীয়তা ব্যায়াম করলে
শরীর
হালকা
লাগে,
ক্লান্তিভাব দূর
হয়,
এবং
সারা
দিন
কাজ
করার
জন্য
প্রস্তুত হয়ে
ওঠে।
এটি
আপনার
দেহে
একটি
ফ্লুইডিটি নিয়ে
আসে।
৮. বয়সজনিত সমস্যায় উপকারী
বয়স
বাড়ার
সঙ্গে
সঙ্গে
পেশি
ও
জয়েন্ট
শক্ত
হয়ে
যায়।
ফলে
দৈনন্দিন কাজ
করতে
কষ্ট
হয়।
নমনীয়তা ব্যায়াম বয়স্ক
মানুষদের জন্য
দারুণ
উপকারী,
কারণ
এটি
জয়েন্টের নমনীয়তা বাড়িয়ে
স্বাভাবিক চলাফেরায় সাহায্য করে।
৯. শরীরের ভারসাম্য ও সমন্বয় উন্নত করে
নমনীয়তা বৃদ্ধির ব্যায়াম মস্তিষ্ক ও
শরীরের
মধ্যে
সমন্বয় সাধনে
সাহায্য করে।
এতে
শরীরের
ভারসাম্য রক্ষা
করা
সহজ
হয়।
যারা
ব্যালে,
ডান্স
বা
অ্যাথলেটিক কাজ
করেন
তাদের
জন্য
এটি
অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
১০. স্লিপ কোয়ালিটি বা ঘুমের মান উন্নত করে
রাতের
ঘুম
ভালো
হলে
শরীর
ও
মন
ভালো
থাকে।
স্ট্রেচিং ব্যায়াম করলে
শরীর
শান্ত
হয়
এবং
ঘুম
ভালো
হয়।
বিশেষ
করে
যারা
ইনসমনিয়ায় ভোগেন,
তাদের
জন্য
এটি
খুব
কার্যকরী হতে
পারে।
নমনীয়তা বৃদ্ধির কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যায়াম:
ব্যায়ামের নাম |
উপকারিতা |
হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচ |
থাই
ও
পিঠের নমনীয়তা বাড়ায় |
ক্যাট-কাউ
পোজ |
মেরুদণ্ড নমনীয় রাখে |
কোবরা স্ট্রেচ |
পিঠ
ও
কোমরের পেশি
প্রসারিত করে |
ফিগার-ফোর
স্ট্রেচ |
হিপ
ফ্লেক্সর শক্তিশালী করে |
বাটারফ্লাই স্ট্রেচ |
কোমরের পেশি
খুলে
দেয় |
সাইড
বেঞ্চ স্ট্রেচ |
কোমর
ও
ফ্ল্যাঙ্কের নমনীয়তা বাড়ায় |
কখন নমনীয়তা ব্যায়াম করবেন?
- সকালে ঘুম থেকে উঠে (৫–১০ মিনিট)
- ব্যায়ামের
আগে বা পরে
- দীর্ঘ সময় বসে থাকার পরে
- রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে
কারা এই ব্যায়াম করবেন?
- ছাত্র-ছাত্রী: পড়ার ফাঁকে শরীরকে ফুরফুরে রাখতে
- অফিস
কর্মী: দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ফলে স্ট্রেস মুক্ত রাখতে
- বয়স্ক
মানুষ: চলাচলে স্বচ্ছন্দতা
আনতে
- অ্যাথলেটরা: পারফরমেন্স উন্নত করতে
- মহিলা
ও পুরুষ উভয়েই এটি সহজেই করতে পারেন
কিছু সতর্কতা:
- ব্যায়াম
শুরুর আগে হালকা ওয়ার্ম আপ করুন।
- বেশি টান পড়লে বা ব্যথা লাগলে থেমে যান।
- ধীরে ধীরে সময় বাড়ান; একবারে বেশি করলে চোট লাগতে পারে।
- চিকিৎসা সমস্যা থাকলে ফিজিওথেরাপিস্ট
বা ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
উপসংহার
নিয়মিত নমনীয়তা বৃদ্ধির ব্যায়াম শরীর
ও
মন—উভয়ের উপরই প্রভাব
ফেলে।
এটি
শুধু
ব্যথা-ব্যথা মুক্ত রাখে
না,
বরং
সার্বিক কর্মক্ষমতা, মেজাজ
ও
ঘুমের
মান
উন্নত
করে।
প্রতিদিন মাত্র
১০–১৫ মিনিট সময়
ব্যয়
করলেই
আপনি
পেতে
পারেন
একটি
প্রাণবন্ত ও
ঝরঝরে
শরীর।
তাই আজ থেকেই আপনি আপনার রুটিনে যোগ করুন নমনীয়তা বৃদ্ধির ব্যায়াম এবং নিজের শরীরকে দিন নতুন এক শক্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য।