হিল রেইজ ব্যায়াম এর উপকারিতা
ভূমিকা:
শরীর
সুস্থ
রাখার
জন্য
ব্যায়াম একটি
অপরিহার্য উপাদান। প্রতিদিনের রুটিনে
কিছু
সময়
ব্যায়ামের জন্য
বরাদ্দ
রাখলে
শারীরিক ও
মানসিক
স্বাস্থ্যের উন্নতি
ঘটে।
এরকমই
একটি
উপকারী
এবং
সহজ
ব্যায়াম হলো
হিল রেইজ ব্যায়াম (Heel Raise Exercise)। এটি
মূলত
পায়ের
পেশী
বিশেষ
করে
কাফ
মাসল
(calf muscles) ও
গোড়ালির শক্তি
বাড়াতে সাহায্য করে।
এই
লেখায়
আমরা
হিল
রেইজ
ব্যায়ামের বিভিন্ন উপকারিতা, সঠিকভাবে কীভাবে
এটি
করতে
হয়,
এবং
কারা
এটি
করতে
পারেন,
সে
সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
করবো।
হিল রেইজ ব্যায়াম কী?
হিল
রেইজ
ব্যায়াম একটি
সহজ
কিন্তু
অত্যন্ত কার্যকর শরীরচর্চা পদ্ধতি। এই
ব্যায়ামে শরীর
সোজা
রেখে
পায়ের
আঙুলের
উপর
ভর
করে
গোড়ালি উপরে
তোলা
হয়,
আবার
নিচে
নামানো
হয়।
এটি
স্ট্যান্ডিং বা
বসে
অবস্থায় করা
যায়
এবং
বিভিন্ন বৈচিত্র্যও আনা
যায়।
হিল রেইজ ব্যায়ামের উপকারিতা:
১. ক্যাফ মাসলের শক্তি বৃদ্ধি
হিল
রেইজ
করার
সময়
মূলত
কাফ
মাসল
(calf muscle) কাজ
করে।
নিয়মিত এই
ব্যায়াম করলে
এই
পেশী
আরও
শক্তিশালী ও
দৃঢ়
হয়।
ফলে
পায়ে
ভার
বহন
করার
ক্ষমতা
বাড়ে
এবং
দৌড়
বা
হাঁটার
সময়
স্থিতিশীলতা তৈরি
হয়।
২. গোড়ালির শক্তি ও স্থিতিশীলতা বাড়ানো
গোড়ালির জয়েন্ট
শরীরের
ভার
বহনের
জন্য
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হিল
রেইজ
ব্যায়াম গোড়ালির চারপাশের পেশীগুলোকে সক্রিয় করে
এবং
স্ট্যাবিলিটি বাড়ায়। ফলে
গোড়ালি মচকানো
বা
ইনজুরি
হওয়ার
সম্ভাবনা কমে
যায়।
৩. ভারসাম্য ও সমন্বয় উন্নত করে
এই
ব্যায়ামটি নিয়মিত করলে
শরীরের
ভারসাম্য বজায়
রাখতে
সহায়তা করে।
বয়স্ক
ব্যক্তিদের পড়ে
যাওয়ার ঝুঁকি
কমাতে
হিল
রেইজ
অত্যন্ত কার্যকরী। এটি
স্নায়ু ও
পেশীর
মধ্যে
যোগাযোগ উন্নত
করে।
৪. অতিরিক্ত ফ্যাট বার্নে সহায়তা
যেহেতু
হিল
রেইজ
একটি
শরীরচর্চা পদ্ধতি,
এটি
নিয়মিত করলে
পায়ের
ফ্যাট
কমতে
থাকে
এবং
পা
দেখতে
আরও
স্লিম
ও
আকর্ষণীয় হয়।
বিশেষ
করে
যারা
পায়ে
চর্বি
জমে
গিয়ে
অস্বস্তি অনুভব
করেন,
তাদের
জন্য
এটি
উপকারী।
৫. স্পোর্টস পারফরমেন্সে উন্নতি
দৌড়বিদ, ফুটবল
খেলোয়াড়, ব্যাডমিন্টন বা
বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের জন্য
পায়ের
শক্তি
ও
গতি
খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। হিল
রেইজ
ব্যায়াম পায়ের
পেশী
ও
গোড়ালিকে মজবুত
করে
স্পোর্টস পারফরমেন্স ভালো
করতে
সাহায্য করে।
৬. অ্যাচিলিস টেন্ডনের স্বাস্থ্য রক্ষা
হিল
রেইজ
করার
সময়
অ্যাচিলিস টেন্ডন
(Achilles tendon) নামক
গুরুত্বপূর্ণ টিস্যুটি সক্রিয় থাকে।
এটি
টেন্ডন
ইনজুরি
প্রতিরোধে কার্যকর এবং
অ্যাথলেটদের ক্ষেত্রে টেন্ডন
ইলাস্টিসিটি ও
স্থায়িত্ব উন্নত
করে।
৭. ব্লাড সার্কুলেশন উন্নত করে
পায়ের
পেশীগুলো কাজ
করলে
শরীরের
নিচের
অংশে
রক্ত
চলাচল
বাড়ে।
বিশেষ
করে
যারা
দীর্ঘক্ষণ বসে
থাকেন
বা
দাঁড়িয়ে কাজ
করেন,
তাদের
জন্য
এই
ব্যায়াম ব্লাড
সার্কুলেশন বাড়িয়ে
ভেরিকোস ভেইন
প্রতিরোধে সহায়তা করে।
৮. আরথ্রাইটিস ও জয়েন্ট পেইন কমাতে সাহায্য করে
যারা
হালকা
আরথ্রাইটিসে ভুগছেন
তাদের
জন্য
হিল
রেইজ
ব্যায়াম ধীরে
ধীরে
জয়েন্টের লুব্রিকেশন উন্নত
করে
এবং
ব্যথা
কমাতে
সাহায্য করে।
৯. শরীরের নিচের অংশের শক্তি বৃদ্ধি
এটি
কেবল
পা
নয়,
বরং
শরীরের
নিচের
অংশ
যেমন
হিপ,
হাঁটু,
পায়ের
পাতা
ইত্যাদির সাথে
সামগ্রিকভাবে কাজ
করে।
যার
ফলে
পায়ে
স্থিতিশীলতা ও
ধৈর্য
বাড়ে।
১০. রিহ্যাবিলিটেশন ও পুনরুদ্ধারে সহায়ক
অনেক
সময়
পা
বা
গোড়ালির ইনজুরির পর
ধীরে
ধীরে
পেশী
পুনর্গঠনের জন্য
চিকিৎসকরা হিল
রেইজ
করার
পরামর্শ দেন।
এটি
ধীরে
ধীরে
শরীরকে
পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে
সাহায্য করে।
কিভাবে হিল রেইজ করবেন? (সঠিক পদ্ধতি)
১.
সোজা
হয়ে
দাঁড়ান। চাইলে
দেয়াল
বা
চেয়ারের পেছনে
হাত
রাখুন
ভারসাম্যের জন্য।
২.
দুই
পায়ের
মাঝখানে প্রায়
কাঁধ-সমান ফাঁকা রাখুন।
৩.
ধীরে
ধীরে
গোড়ালি উপরের
দিকে
তুলুন
যতটা
সম্ভব
(পায়ের
আঙুলের
ওপর
ভর
দিয়ে)।
৪.
কয়েক
সেকেন্ড উপরের
অবস্থায় থাকুন।
৫.
এবার
ধীরে
ধীরে
গোড়ালি নিচে
নামিয়ে আনুন।
৬.
এই
প্রক্রিয়াটি ১০-১৫ বার পুনরাবৃত্তি করুন।
দিনে
২-৩ সেট করলে
ভালো
ফল
পাওয়া
যায়।
বিভিন্ন ধরণের হিল রেইজ:
- স্ট্যান্ডিং
হিল রেইজ (দাঁড়িয়ে)
- সিটিং
হিল রেইজ (বসে)
- ওয়ান
লেগ হিল রেইজ (এক পায়ে)
- ডাম্বেল
বা ওয়েট নিয়ে হিল রেইজ
- স্টেপ
হিল রেইজ (স্টেপ বা উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে)
কারা এই ব্যায়াম করতে পারবেন?
- সকল বয়সের পুরুষ ও মহিলা
- খেলোয়াড়,
দৌড়বিদ, নৃত্যশিল্পী
- বয়স্ক মানুষ যারা ভারসাম্য
হারানোর ঝুঁকিতে আছেন
- আরথ্রাইটিস
বা পায়ের দুর্বলতায় ভোগা ব্যক্তি
- যাঁরা দীর্ঘক্ষণ
দাঁড়িয়ে বা বসে কাজ করেন
সতর্কতা:
- ব্যায়ামের
শুরুতে খুব বেশি না করে ধীরে ধীরে রুটিন তৈরি করুন।
- ব্যথা বা ইনজুরির সমস্যা থাকলে আগে চিকিৎসকের
পরামর্শ নিন।
- পিচ্ছিল বা শক্ত মেঝেতে ব্যায়াম
করবেন না।
- সঠিক ভঙ্গিতে না করলে গোড়ালি বা পায়ের পাতায় ব্যথা হতে পারে।
উপসংহার:
হিল রেইজ ব্যায়াম সহজ হলেও এর উপকারিতা অসাধারণ। এটি শুধু পায়ের সৌন্দর্য বা ফিটনেস বাড়ায় না, বরং শরীরের স্থিতিশীলতা, ভারসাম্য এবং সামগ্রিক কর্মক্ষমতা উন্নত করে। বিশেষ করে যারা ব্যস্ত সময়ে জিমে যেতে পারেন না, তারা ঘরে বসেই এই ব্যায়াম করে উপকার পেতে পারেন। নিয়মিত চর্চা ও ধৈর্যের মাধ্যমে হিল রেইজ ব্যায়াম হতে পারে আপনার সুস্থ জীবনের এক নির্ভরযোগ্য অংশ।