গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হয়
গর্ভাবস্থা বা
প্রেগন্যান্সি একটি
নারীর
জীবনের
অন্যতম
গুরুত্বপূর্ণ ও
আবেগঘন
সময়।
এই
সময়
শরীরে
ও
মনে
অনেক
পরিবর্তন আসে,
যার
মধ্যে
সবচেয়ে লক্ষণীয় পরিবর্তন হলো
পেট
বড়
হওয়া।
অনেকেই
জানতে
চান,
গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হয়, কেন
হয়,
কীভাবে
পরিবর্তন ঘটে
এবং
এই
পরিবর্তনের পেছনে
শারীরিক ও
হরমোনগত কোন
কারণগুলি কাজ
করে।
এই
লেখায়
আমরা
এই
সব
বিষয়ে
বিস্তারিত আলোচনা
করব।
🟩
গর্ভাবস্থার ধাপসমূহ
প্রথমেই বুঝে
নেওয়া
জরুরি
যে,
গর্ভাবস্থাকে মূলত
৩টি
ধাপে
বা
ত্রৈমাসিক (Trimester)
ভাগ
করা
হয়:
- প্রথম
ত্রৈমাসিক: ১ম মাস থেকে ৩য় মাস (১-১২ সপ্তাহ)
- দ্বিতীয়
ত্রৈমাসিক: ৪র্থ মাস থেকে ৬ষ্ঠ মাস (১৩-২৭ সপ্তাহ)
- তৃতীয়
ত্রৈমাসিক: ৭ম মাস থেকে প্রসব পর্যন্ত (২৮-৪০ সপ্তাহ)
পেট
বড়
হওয়ার
বিষয়টি
মূলত
দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক থেকে
দৃশ্যমান হতে
শুরু
করে
এবং
তৃতীয়
ত্রৈমাসিকে এসে
তা
স্পষ্টভাবে চোখে
পড়ে।
🟨
গর্ভাবস্থায় পেট কখন বড় হয়?
✅
প্রথম ত্রৈমাসিক (১-৩ মাস)
এই
ধাপে
গর্ভফুল (placenta), ভ্রূণের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরি
হয়।
কিন্তু
অনেক
নারীর
পেট
তখনো
বড়
হয়
না।
হরমোন
পরিবর্তনজনিত কারণে
এই
সময়
ক্লান্তি, বমিভাব,
ঘন
ঘন
প্রস্রাব, স্তনের
আকার
পরিবর্তন, এবং
ক্ষুধা
বৃদ্ধি
দেখা
যায়।
তবে
বাহ্যিকভাবে পেট
সাধারণত তেমন
একটা
বড়
হয়
না।
কেন
হয়
না?
- ভ্রূণের আকার তখনো খুব ছোট।
- জরায়ু তখন পেলভিসের
মধ্যেই থাকে, উপরদিকে উঠেনি।
- তবে যাদের আগে গর্ভধারণ
হয়েছে বা যমজ সন্তান আসছে, তাদের ক্ষেত্রে কিছুটা পেট ফুলে উঠতে পারে।
✅
দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক (৪-৬ মাস)
এই
সময়েই
পেট বড় হতে শুরু করে এবং
এটি
গর্ভাবস্থার সবচেয়ে আরামদায়ক সময়
ধরা
হয়।
- জরায়ু এখন ধীরে ধীরে পেলভিসের
বাইরে উঠে আসতে শুরু করে।
- ভ্রূণের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত
হয়।
- ১৬-২০ সপ্তাহের
মধ্যে বেশিরভাগ নারীর পেট চোখে পড়ার মতো বড় হয়।
৪র্থ
মাসে
হালকা
ও
গোলাকার উঁচু
পেট
দেখা
যায়।
৫ম
মাসে
পেট
বেশ
ভালোভাবে বোঝা
যায়
– বিশেষ
করে
যাদের
শরীর
তুলনামূলক পাতলা।
৬ষ্ঠ
মাসে
এসে
অনেকে
মাতার্ণিটি জামা
পরা
শুরু
করেন
কারণ
সাধারণ
পোশাক
আর
ঠিকমতো
মানায়
না।
✅
তৃতীয় ত্রৈমাসিক (৭-৯ মাস)
এটাই
সেই
সময়
যখন
পেট
সবচেয়ে বড়
হয়।
ভ্রূণ
এখন
দ্রুত
ওজন
বাড়াচ্ছে এবং
অনেক
নারী
নিজেই
পেটের
ভারে
ক্লান্ত হয়ে
পড়েন।
৭ম
মাসে
পেট
উপরের
দিকে
ঠেলে
ওঠে।
৮ম
মাসে
ভ্রূণের চলাফেরা স্পষ্ট
বোঝা
যায়।
৯ম
মাসে
শিশুর
মাথা
নিচের
দিকে
অবস্থান করে,
এবং
পেট
কিছুটা
নিচে
নেমে
যায়
– যাকে
বলা
হয়
“লাইটেনিং” বা
হালকা
অনুভব
হওয়া,
কারণ
শিশুর
মাথা
জন্মের
প্রস্তুতি নিচ্ছে।
🟨
পেট বড় হওয়ার পেছনের কারণ
পেট
বড়
হওয়ার
প্রধান
কারণ
হলো
জরায়ুর (uterus)
বৃদ্ধি। সাধারণত, গর্ভাবস্থায় জরায়ু
আকারে
প্রায়
২০
গুণ
পর্যন্ত বড়
হয়।
অন্যান্য কারণগুলো হলো:
- ভ্রূণের
বৃদ্ধি
- গর্ভাবস্থার
শুরুতে ভ্রূণ অতি ক্ষুদ্র হলেও ধীরে ধীরে তা একটি পূর্ণাঙ্গ শিশুর আকার ধারণ করে।
- প্ল্যাসেন্টা
বা গর্ভফুলের গঠন
- এটি ভ্রূণের
পুষ্টি ও অক্সিজেন পরিবহনে সাহায্য করে। এর আকার ওজন বাড়ে, ফলে পেটও বড় হয়।
- অ্যামনিয়োটিক
ফ্লুইড
- শিশুকে রক্ষা করে যে তরল পদার্থ, সেটিও পেট ফোলানোর
একটি বড় কারণ।
- চর্বি
জমা
- হরমোনের
কারণে অনেক নারীর কোমর ও তলপেটে কিছুটা চর্বি জমা হয়, যাতে প্রসবকালীন সময়ে সহায়তা পায়।
- পেশি
ও লিগামেন্ট প্রসারণ
- পেটের পেশিগুলো
শিশুকে জায়গা করে দেওয়ার জন্য প্রসারিত হয়।
🟧
পেট বড় হওয়ার সময় কিছু ভিন্নতা কেন থাকে?
সব
নারীর
পেট
একইভাবে বা
একই
সময়ে
বড়
হয়
না।
কারণগুলোর মধ্যে
রয়েছে:
- শরীরের
গঠন – যাদের শরীর পাতলা, তাদের পেট তাড়াতাড়ি বোঝা যায়।
- প্রথম
সন্তান না হলে – আগে সন্তান জন্ম দিলে পেট তাড়াতাড়ি বড় হয়।
- যমজ
সন্তান – একাধিক ভ্রূণ থাকলে পেট দ্রুত ও
বড় আকারে ফোলে।
- বয়স – কিছু ক্ষেত্রে
বয়সভেদে পেশির নমনীয়তা ভিন্ন হয়।
- জেনেটিক
ফ্যাক্টর – মায়ের শরীর কেমন হবে, তা অনেকটা বংশগতির উপরও নির্ভর করে।
🟨
পেট বড় হওয়া কি গর্ভাবস্থার স্বাস্থ্যের সূচক?
না,
সবসময়
নয়।
অনেকের
পেট
কম
বড়
হলেও
শিশুটি
সম্পূর্ণ সুস্থ
থাকতে
পারে।
আবার
কারও
পেট
খুব
বড়
হলেও
সেটা
অতিরিক্ত পানি
বা
গ্যাস্ট্রিকের কারণে
হতে
পারে।
তাই
শুধুমাত্র পেট
দেখে
শিশুর
স্বাস্থ্য বোঝা
সম্ভব
নয়।
আল্ট্রাসাউন্ড ও
প্রেগন্যান্সি চেক-আপ-এর
মাধ্যমে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়।
🟩
গর্ভাবস্থায় পেট বড় হওয়ার সময় যত্নের পরামর্শ
✅
পরিধেয়
- ঢিলেঢালা
ও
আরামদায়ক পোশাক পরুন
- মেটারনিটি
বেল্ট বা সাপোর্ট ব্যবহার করতে পারেন
✅
ঘুম
- বাঁ দিকে কাত হয়ে ঘুমানো নিরাপদ
- বালিশ দিয়ে পেট ও পায়ের নিচে সাপোর্ট দিন
✅
খাবার
- পুষ্টিকর
খাবার গ্রহণ করুন: দুধ, ডিম, ফল, শাকসবজি
- অতিরিক্ত
চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন
✅
ব্যায়াম
- হালকা হাঁটা, প্রেগন্যান্সি
যোগা উপকারী
- চিকিৎসকের
পরামর্শ ছাড়া ভারী ব্যায়াম করবেন না
✅
চিকিৎসা
- মাসিক চেকআপে যেতে ভুলবেন না
- যেকোন অস্বাভাবিকতা
(মত পেটের ব্যথা, রক্তপাত, বমি) হলে দ্রুত ডাক্তার দেখান
🟥
সতর্কতা
- পেট হঠাৎ অনেক বড় বা ছোট মনে হলে চিকিৎসকের
সঙ্গে যোগাযোগ করুন
- পেটের আকারে অনিয়ম হলে তা অ্যামনিওটিক
ফ্লুইড বা ভ্রূণের বৃদ্ধি সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে
✅
উপসংহার
গর্ভাবস্থায় সাধারণত ৪র্থ মাসের মাঝামাঝি থেকে ৫ম মাসে পেট বড় হতে শুরু করে এবং ৭-৯ মাসে এসে তা পুরোপুরি পরিপূর্ণ আকার ধারণ করে। তবে, এই সময়সীমা একেক নারীর জন্য ভিন্ন হতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো – গর্ভাবস্থার পুরো সময়টিতে সঠিক যত্ন, পুষ্টি, এবং চিকিৎসকের তত্ত্বাবধান। কারণ একটি সুস্থ মা-ই পারে একটি সুস্থ শিশুর জন্ম দিতে।