মেয়েদের মোটা হওয়ার ব্যায়াম

মেয়েদের মোটা হওয়ার ব্যায়াম

আমাদের সমাজে ওজন কমানো নিয়ে যতটা আলোচনা হয়, তার তুলনায় ওজন বাড়ানো বা মোটা হওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব অনেক কম। অথচ অনেক মেয়ে আছেন, যারা অত্যধিক শুকনো শরীরের কারণে আত্মবিশ্বাস হারান, বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন এবং মানসিক চাপে পড়েন। তাদের জন্য স্বাস্থ্যকরভাবে ওজন বাড়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে ওজন বাড়াতে হবে ঠিকমতো খাওয়া সঠিক ব্যায়ামের মাধ্যমেনা হলে শুধু পেট মুখ মোটা হয়ে বাকি শরীর হালকা থেকে যায়। তাইমেয়েদের মোটা হওয়ার ব্যায়ামএকটি গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানসম্মত বিষয়।


কেন ব্যায়াম করে মোটা হওয়া জরুরি?

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, মোটা হওয়া মানেই চর্বি জমানো নয়। সুস্থভাবে মোটা হওয়া মানে পেশী বাড়িয়ে শরীরে গঠন তৈরি করা। যারা খালি খেয়ে খেয়ে মোটা হওয়ার চেষ্টা করেন, তারা হয়তো সাময়িকভাবে কিছু ওজন পান, কিন্তু সেই ওজন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফ্যাট বা মেদ হয়ে জমে যায়। আর তা শরীরকে ভারসাম্যহীন অসুন্দর করে তোলে। ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন বাড়ালে শরীর হবে শক্ত, সুগঠিত এবং আকর্ষণীয়।


মেয়েদের মোটা হওয়ার জন্য উপযুক্ত ব্যায়ামসমূহ

. স্কোয়াট (Squats)

স্কোয়াট একটি কম্পাউন্ড ব্যায়াম, যা পা, পাছা হিপ অংশে পেশি তৈরি করে। এটি নিয়মিত করলে হিপ বড় হয়, কোমর উরু মোটা হয় এবং দেহের নিম্নাংশে আকর্ষণীয় গঠন আসে।

পদ্ধতি:

  • সোজা হয়ে দাঁড়ান
  • দুই পা কাঁধ সমান দূরত্বে রাখুন
  • হাত সামনের দিকে সোজা রাখুন
  • হাঁটু ভেঙে আস্তে আস্তে নিচের দিকে বসুন
  • আবার উঠে দাঁড়ান
  • সেট করুন, প্রতিটি সেটে ১২-১৫ বার

. লাঞ্জেস (Lunges)

লাঞ্জেস করার মাধ্যমে উরু, হিপ এবং পায়ে পেশি বাড়ে, যা মেয়েদের শরীরের আকৃতি উন্নত করতে সাহায্য করে।

পদ্ধতি:

  • সোজা হয়ে দাঁড়ান
  • এক পা সামনে বাড়িয়ে হাঁটু ভেঙে নিচু হন
  • অন্য পা পিছনে রাখুন
  • ১০ বার করে দুই পায়ের জন্য সেট

. পুশ-আপ (Push-Up)

অনেকেই মনে করেন এটি ছেলেদের ব্যায়াম, কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রেও এটি খুব উপকারী। পুশ-আপ বুক, হাত এবং পিঠের পেশি গঠন করে, যা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।

পদ্ধতি:

  • মেঝেতে হালকা ভঙ্গিতে শুয়ে হাত দিয়ে শরীর তুলুন
  • দেহ সোজা রাখুন এবং বুক নিচে নামিয়ে আবার তুলুন
  • দিনে ১০-১৫ বার শুরু করে ধীরে ধীরে বাড়ান

. হিপ থ্রাস্ট (Hip Thrust)

এটি বিশেষভাবে হিপ নিতম্বের পেশি গঠনের জন্য কার্যকর। যারা হিপ পাছা বড় করতে চান, তাদের জন্য এটি খুব উপযোগী।

পদ্ধতি:

  • একটি বেঞ্চ বা চেয়ার পেছনে রেখে বসুন
  • হাঁটু ভাঙা অবস্থায় পা মাটিতে রাখুন
  • পিঠের উপর অংশ বেঞ্চে রেখে কোমর উপরে তুলুন
  • ১২-১৫ বার করে সেট

. ডাম্বেল ওয়েট ট্রেনিং (Dumbbell Weight Training)

হালকা ডাম্বেল দিয়ে হাত কাঁধের পেশি গঠন করা যায়। এতে করে দেহের ওপরের অংশে সুগঠিত আকৃতি আসে।

পদ্ধতি:

  • প্রতি হাতে হালকা - কেজির ডাম্বেল নিন
  • সামনে, পাশে ওপর দিকে তোলার অনুশীলন করুন
  • প্রতিটি অনুশীলন ১০-১৫ বার করে করুন

ব্যায়ামের পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন

ওজন বাড়ানোর জন্য ব্যায়ামের পাশাপাশি খাদ্যতালিকাও গুরুত্বপূর্ণ। শুধু ব্যায়াম করলে হবে না, দেহকে প্রয়োজনীয় ক্যালোরি, প্রোটিন পুষ্টি দিতে হবে।

ওজন বাড়ানোর জন্য খাদ্য তালিকায় যা থাকবে:

  • প্রোটিন: ডিম, মাংস, মাছ, দুধ, ডাল, সয়াবিন
  • স্বাস্থ্যকর ফ্যাট: বাদাম, অ্যাভোকাডো, অলিভ অয়েল, ঘি
  • জটিল কার্ব: ওটস, ব্রাউন রাইস, আলু, মিষ্টি আলু
  • ফল সবজি: প্রতিদিন - ধরনের রঙিন ফল এবং সবজি
  • দুধ দুধজাত খাবার: পূর্ণচর্বিযুক্ত দুধ, দই, পনির

খাওয়ার নিয়ম:

  • দিনে অন্তত - বার খান (৩টি প্রধান খাবার -৩টি হালকা খাবার)
  • প্রতিবার ব্যায়ামের পর একটি হাই প্রোটিন খাবার বা মিল নিন
  • প্রতিদিন অন্তত .- লিটার পানি পান করুন

জীবনধারায় পরিবর্তন আনুন

. ঘুম: প্রতিদিন - ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। পেশি গঠনের সময় দেহ বিশ্রামে থাকলে সেটা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

. স্ট্রেস কমানো: অতিরিক্ত টেনশন বা মানসিক চাপ শরীরের হরমোনে সমস্যা তৈরি করে, যা ওজন বাড়াতে বাধা দেয়।

. অ্যালকোহল ধূমপান এড়িয়ে চলুন: এগুলো শরীরের পুষ্টি গ্রহণ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় শরীর শুকিয়ে যায়।

ব্যায়াম শুরুর আগে কিছু সতর্কতা

  • হঠাৎ করে ভারী ব্যায়াম না করে ধীরে ধীরে শুরু করুন
  • অভিজ্ঞ ট্রেইনারের পরামর্শ নিন
  • ব্যায়াম করার আগে পরে ওয়ার্ম আপ স্ট্রেচিং করুন
  • ব্যথা বা অস্বস্তি হলে ব্যায়াম বন্ধ করুন

উপসংহার

মেয়েদের মোটা হওয়ার জন্য শুধু খাওয়া নয়, বরং সঠিক ব্যায়াম জীবনধারার সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্কোয়াট, লাঞ্জেস, হিপ থ্রাস্ট ইত্যাদি ব্যায়াম নিয়মিতভাবে করলে শরীরে পেশি তৈরি হবে, আকৃতি উন্নত হবে এবং ওজন স্বাস্থ্যকরভাবে বাড়বে। পাশাপাশি সুষম খাদ্য সঠিক ঘুম এই প্রক্রিয়াকে দ্রুত ফলপ্রসূ করবে।

সুস্থভাবে মোটা হওয়া মানেই শুধু শরীরের ওজন বাড়ানো নয়, বরং আত্মবিশ্বাস, সৌন্দর্য এবং সুস্থতা অর্জন করা। তাই সময় নিন, নিয়ম মেনে চলুন এবং ধৈর্য ধরুনআপনার কাঙ্ক্ষিত ফল অবশ্যই আসবে।

Post a Comment