জিম করার উপকারিতা ও অপকারিতা

জিম করার উপকারিতা অপকারিতা

মানবদেহ একটি জটিল দুর্দান্ত কৌশলে গঠিত যন্ত্র। এই যন্ত্রকে কার্যকর সুস্থ রাখতে হলে নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে মানুষ দিন দিন শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছে। এই প্রেক্ষাপটেজিমবা জিমনেশিয়াম একটি জনপ্রিয় কার্যকর সমাধান হিসেবে মানুষের জীবনে জায়গা করে নিয়েছে। জিমে ব্যায়াম করার মাধ্যমে শরীরকে সুস্থ আকর্ষণীয় রাখার চেষ্টা করা হয়। তবে যেমন এর রয়েছে বহুবিধ উপকারিতা, তেমনি কিছু অপকারিতাও রয়েছে।


জিম করার উপকারিতা

. শারীরিক সুস্থতা ফিটনেস বজায় রাখা

জিমে নিয়মিত ব্যায়াম করার প্রধান উপকারিতা হলো দেহের ফিটনেস রক্ষা। নিয়মিত পরিকল্পিত ব্যায়ামের ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, পেশী শক্তিশালী হয়, হাড় মজবুত হয় এবং দেহে ফুরফুরে ভাব তৈরি হয়। কার্ডিও ওয়েট ট্রেনিং একসাথে করলে শরীরের সব অংশে উন্নয়ন ঘটে।


. হৃদরোগ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক

নিয়মিত জিমে ব্যায়াম করলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, কোলেস্টেরল হ্রাস পায় এবং হৃদপিণ্ডের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। এছাড়াও, ব্যায়াম ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়, যার ফলে টাইপ- ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

. মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন

ব্যায়ামের সময় শরীরে এন্ডরফিন নামক হরমোন নিঃসৃত হয়, যাকেহ্যাপি হরমোনবলা হয়। এটি দুশ্চিন্তা অবসাদ দূর করে মন ভালো রাখে। জিমে গেলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে, এবং শরীরের পরিবর্তন দেখে মানসিক তৃপ্তি লাভ হয়।

. ভালো ঘুম হওয়া

নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে শরীর ক্লান্ত হয়, এবং এটি রাতে গভীর নিরবিচারে ঘুম পেতে সহায়তা করে। যারা ইনসমনিয়া বা ঘুম না হওয়ার সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য জিম এক ধরনের প্রাকৃতিক চিকিৎসা হতে পারে।

. বয়স ধরে রাখা দীর্ঘায়ু লাভ

জিমে ব্যায়াম করলে কোষে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, দেহের টক্সিন দূর হয় এবং কোষ গঠন ভালো থাকে। ফলে শরীরের বার্ধক্য প্রক্রিয়া ধীর হয় এবং মানুষ দীর্ঘদিন তরুণ কর্মক্ষম থাকতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত শরীরচর্চা জীবনকাল বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।

. যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি

শরীর ফিট থাকলে এবং রক্তসঞ্চালন ভালো হলে যৌন ক্ষমতা স্বাভাবিক থাকে বা আরও ভালো হয়। বিশেষ করে পেশী গঠন স্ট্যামিনা বাড়লে সহবাসের সময় আত্মবিশ্বাস ক্ষমতা দুই- বৃদ্ধি পায়।

. অভ্যাস গঠনের মাধ্যমে শৃঙ্খলা

জিমে যেতে হলে সময় মেনে চলা, ডায়েট মেনে খাওয়া এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। ফলে জীবনে শৃঙ্খলা নিয়মিততা আসে। এই অভ্যাস কর্মজীবনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

জিম করার অপকারিতা

যদিও জিমের উপকারিতা অনেক, তবে সঠিক নিয়ম না মেনে বা অতিরিক্ত উৎসাহে ব্যায়াম করলে কিছু অপকারিতা বা ঝুঁকির মুখে পড়তে হয়।

. অতিরিক্ত ব্যায়ামে শরীরের ক্ষতি

অনেকেই দ্রুত ফল পাওয়ার আশায় অতিরিক্ত সময় ধরে ভারী ব্যায়াম করেন। এতে শরীরের মাংসপেশি ছিঁড়ে যেতে পারে, জয়েন্টে ব্যথা হয় বা স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কখনো কখনো এই ক্ষতি স্থায়ী হতে পারে।

. হঠাৎ ব্যায়াম বন্ধ করলে ওজন বেড়ে যাওয়া

অনেকেই একটি নির্দিষ্ট সময় জিম করেন, তারপর নানা কারণে বন্ধ করে দেন। জিম বন্ধ করার পরও যদি একইভাবে খাওয়া চালিয়ে যান, তাহলে ওজন দ্রুত বেড়ে যায় এবং আগের থেকে খারাপ অবস্থায় ফিরে যেতে হয়।

. ডিপেন্ডেন্সি তৈরি হওয়া

কিছু মানুষ জিমের উপর এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েন যে জিম ছাড়া তারা মানসিকভাবে অস্থির হয়ে পড়েন। এটি একধরনের মানসিক আসক্তি বা জিম-অ্যাডিকশন হিসেবে পরিচিত।

. শরীরচর্চা নিয়ে অতিরিক্ত সচেতনতা (বডি ডিসমরফিয়া)

জিমে যাওয়া অনেক সময় আত্মবিশ্বাস বাড়ায় ঠিকই, তবে কেউ কেউ তাদের শরীর নিয়ে অতিরিক্ত সচেতন হয়ে পড়ে। নিজের শরীর নিয়ে অতৃপ্তি বাড়তে থাকে, যা মানসিক চাপ আত্মসম্মানহানির কারণ হতে পারে।

. ইনজুরি বা দুর্ঘটনার সম্ভাবনা

অনভিজ্ঞদের ক্ষেত্রে ভুল পদ্ধতিতে ভারোত্তোলন করলে পিঠ, হাঁটু, বা কাঁধে চোট লাগতে পারে। অনেক সময় ট্রেইনার ছাড়াই ব্যায়াম করলে মারাত্মক দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারে।

. প্রোটিন সাপ্লিমেন্টের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

জিমে শরীর গঠন বা ওজন কমানোর জন্য অনেকেই প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট, ফ্যাট বার্নার, স্টেরয়েড গ্রহণ করেন। এগুলোর অনিয়ন্ত্রিত বা অতিরিক্ত ব্যবহার কিডনি, লিভার, হৃদযন্ত্রে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করতে পারে।

. সময় অর্থের ব্যয়

জিমে নিয়মিত যাওয়া অনেক সময় সময়সাপেক্ষ ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়ায়। শহুরে জীবনে ট্রাফিক, ব্যস্ততা দামের কারণে অনেকেই নিয়মিত জিমে যেতে পারেন না। তাছাড়া, ব্যায়ামের পোশাক, সাপ্লিমেন্ট, ট্রেইনার ফি ইত্যাদির খরচও অনেক।

জিম করার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা

. ডাক্তারের পরামর্শ: যাদের হার্টের সমস্যা, হাঁপানি, উচ্চ রক্তচাপ বা অন্য কোনো দীর্ঘস্থায়ী রোগ আছে, তারা জিম শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

. ট্রেইনারের সাহায্য: জিমে একজন প্রফেশনাল ট্রেইনারের সহায়তায় ব্যায়াম করা উচিত যাতে ভুলভাল পদ্ধতিতে ইনজুরি না হয়।

. সঠিক ডায়েট: শুধু ব্যায়াম করলেই হবে না, খাওয়ার প্রতি সতর্ক হতে হবে। অতিরিক্ত প্রোটিন বা ক্যালোরি গ্রহণের আগে জানতে হবে শরীরের প্রয়োজন কতটুকু।

. রেস্ট এবং স্লিপ: শরীরচর্চার পর বিশ্রাম এবং গভীর ঘুম অত্যন্ত প্রয়োজন। পেশী গঠনের জন্য বিশ্রাম একটি অপরিহার্য অংশ।

. ওয়ার্ম-আপ কুল-ডাউন: ব্যায়াম শুরুর আগে ওয়ার্ম-আপ এবং শেষে কুল-ডাউন করলে ইনজুরি কম হয় শরীর ফ্লেক্সিবল থাকে।

উপসংহার

জিমে ব্যায়াম করা শরীর এবং মন উভয়ের জন্যই উপকারী। এটি শুধু শারীরিক গঠন নয়, বরং জীবনযাপনের ধরন মান উন্নয়নে সহায়ক। তবে সবকিছুরই একটি সীমা রয়েছে। জিম করতে হবে সচেতনভাবে, নিজের দেহের চাহিদা বুঝে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী। অতিরিক্ত চেষ্টার ফলে উপকারের বদলে অপকার হতে পারে, যা জীবনযাত্রাকে জটিল করে তুলতে পারে। তাইসতর্কতা, নিয়মিততা পরিমিতি”—এই তিনটি বিষয় মেনে চললে জিম করা জীবনের জন্য এক মহৌষধ হয়ে উঠতে পারে।

Post a Comment